আফ্রিকা কবিতার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর


১) আফ্রিকা কবিতাটি যে কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে- পত্রপুট

২) আফ্রিকা কবিতাটি প্রথম যে পত্রিকা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল- প্রবাসী

৩) আফ্রিকা কবিতার প্রকাশকাল- চৈত্র, ১৩৪৩ বঙ্গাব্দ

৪) আফ্রিকা কবিতাটি রচনার অনুরোধ কবি পেয়েছিলেন যার কাছে- অমিয় চক্রবর্তী

৫) আফ্রিকা কবিতাটি কবি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন- ১৭ই মার্চ, ১৯৩৭ খ্রিঃ

৬) আফ্রিকা কবিতাতির ইংরেজি অনুবাদের শিরোনাম- Spectator

৭) আদিম যুগে স্রষ্টার কার প্রতি অসন্তোষ ছিল- নিজের প্রতি

৮) সমুদ্রের বাহু- রুদ্র

৯) 'প্রাচী' শব্দের অর্থ- পূর্ব দিক

১০) আফ্রিকাকে বাঁধা হয়েছিল- কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে

১১) 'চেতনাতীত' শব্দের অর্থ- ইন্দ্রিয়াতীত

১২) আফ্রিকা বিদ্রুপ করেছিল- ভীষণকে

১৩) 'উগ্র' শব্দটির বিপরীতার্থক শব্দ- সৌম্য

১৪) 'দুন্দুভিনিনাদ' শব্দটির অর্থ হল- দামামা জাতীয় রণবাদ্য


১৫) 'ছায়াবৃতা' শব্দের অর্থ হল- ছায়ায় আবৃতা যে নারী

১৬) কালো ঘোমটার নীচে অপরিচিত ছিল- আফ্রিকার মানবরূপ

১৭) 'আবিল' শব্দের অর্থ- কলুষিত

১৮) 'এল ওরা'- 'ওরা' হল- ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদীরা 

১৯) 'তীক্ষ্ণ' শব্দের অর্থ- ধারালো

২০) নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে

২১) গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্য হারা - অরণ্যের চেয়ে

২২) দস্যু পায়ের জুতো ছিল- কাঁটা-মারা

২৩) আফ্রিকার ইতিহাস হয়েছিল- অপমানিত

২৪) মন্দিরে বাজছিল- পুজার ঘন্টা

২৫) শিশুরা খেলছিল- মায়ের কোলে

২৬) কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল- সুন্দরের আরাধনা 

২৭) 'প্রদোষ' শব্দের অর্থ- সন্ধ্যা

২৮) গুপ্ত গহ্বর থেকে বেরিয়ে এসেছিল- পশুরা

২৯) 'প্রলাপ' শব্দটির অর্থ- অর্থহীন উক্তি

৩০) সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণীটি হল- ক্ষমা করো



১) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কার অনুরোধে 'আফ্রিকা' কবিতাটি রচনা করেন?

উঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার স্নেহধন্য কবি অমিয় চক্রবর্তীর অনুরোধে আফ্রিকা কবিতাটি রচনা করেন।

২) "ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে,” -কে, কাকে কোথা থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল?

উঃ বিশ্বসৃষ্টির আদিপর্বে যখন পার্থিব ভূগোলে নানা পরিবর্তন সাধিত হচ্ছিল, তখন রুদ্র সমুদের বাহু আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল ভুখন্ড থেকে।

৩) "কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে।" -আলোকে 'কৃপণ' বলা হয়েছে কেন?

উঃ সৌরসংসারে সূর্যের আলো অপরিমেয় হয়ে পৃথিবীর উপর পতিত হলেও, অরণ্যসঙ্কুল আফ্রিকায় তার প্রবেশ কম বলেই কবি 'কৃপণ' আলো বলেছেন।

৪) "বিদ্রুপ করছিলে ভীষণকে" - কিভাবে 'বিদ্রুপ' করছিল?

উঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'আফ্রিকা' কবিতায় প্রকৃতির ঘন রহস্যমাখা বুকে জেগে থাকা ভীষণ বা ভয়ালকে স্বয়ং, আফ্রিকা বিরূপের ছদ্মবেশে বিদ্রুপ করেছিল।

৫) "অপরিচিত ছিল তোমার মানব রূপ" -কেন মানবরূপ অপরিচিত ছিল?

উঃ জঙ্গলাকীর্ণ ও বনস্পতির পাহারায় নিবিড় ছায়াচ্ছন্ন আফ্রিকাকে সভ্যতার উগ্রতা স্পর্শ করতে পারেনি। তাই মানবিকতাবোধের চিরস্নিগ্ধ রূপটি সমগ্র পৃথিবীর কাছে অপরিচিত ছিল।

৬) "এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে" -লোহার হাতকড়ি নিয়ে তারা কী করেছিল?

উঃ নেকড়ের চেয়ে তীক্ষ্ণ নখযুক্ত সাম্রাজ্যবাদী মানুষ ধরার দল আফ্রিকার বস্তুসম্পদ ও মানব সম্পদের লোভে কঠিন হাতকড়িতে বন্দি করল আফ্রিকাকে।

৭) "মানুষ-ধরার দল" বলতে কবিতায় কাদের বোঝানো হয়েছে?

উঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 'আফ্রিকা' কবিতায় -'মানুষ ধরার দল' বলতে সাম্রাজ্যবাদীদের বোঝানো হয়েছে।

৮) "তোমার ভাষাহীন ক্রন্দনে" -ভাষাহীন ক্রন্দন কার ছিল?

উঃ আপন সত্তার রহস্য উন্মোচনে মগ্ন 'আফ্রিকা' অকস্মাৎ সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত হলে, সে উদগত ভাষাহীন ক্রন্দনে ভেসে গিয়েছিল।

৯) আফ্রিকার ধূলি কীভাবে পঙ্কিল হয়ে উঠেছিল?

উঃ সামাজ্যবাদীদের বর্বর লোভ ও নির্মম অত্যাচারে আফ্রিকাবাসীদের বেদনার অশ্রু ও প্রতিবাদের রক্ত মিশে ধূলি পঙ্কিল হয়ে উঠেছিল।

১০) "সমুদ্রপারে সেই মুহূর্তেই" কী ঘটেছিল?

উঃ সমুদ্রপারে সেই মুহূর্তেই সাম্রাজ্যবাদীদের পাড়ায় পাড়ায় মন্দিরে বাজছিল পূজার ঘন্টা এবং শিশুরা নিশ্চিন্তে মায়ের কোলে খেলছিল।

১১. উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম যুগে” – 'আদিম যুগ' বলতে কোন্ সময়পর্বের কথা বোঝানো হয়েছে?

উঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'আফ্রিকা' কবিতায় 'আদিম যুগ' বলতে বিশ্বসৃষ্টির সূচনাপর্বের কথা বোঝানো হয়েছে।

১২. "তাঁর সেই অধৈর্যে ঘন-ঘন মাথা নাড়ার দিনে" কে, কেন অধৈর্যে ঘনঘন মাথা নাড়িয়েছেন?

উঃ বিশ্বস্রষ্টা ঈশ্বর সৃষ্টিপর্বের শুরুর দিকে নিজের প্রতি অসন্তোষে তাঁর নতুন সৃষ্টিকে বারবার ধ্বংস করেছিলেন আর অধৈর্যে ঘনঘন মাথা নাড়িয়েছিলেন।

১৩) "ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে, আফ্রিকা" – কে আফ্রিকাকে কোথা থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল?

উঃ আলোচ্য অংশে বলা হয়েছে উত্তাল সমুদ্রের বাহু যেন 'প্রাচী ধরিত্রী' অর্থাৎ পৃথিবীর পূর্বদিকের দেশগুলির থেকে আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল।

১৪. কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে"- আলো 'কৃপণ' কেন?

উঃ আফ্রিকার নিরক্ষীয় অঞ্চলে রয়েছে চিরহরিৎ বৃক্ষের ঘন অরণ্যভূমি। সূর্যের আলো এই অরণ্যভূমিতে প্রায় ঢুকতেই পারে না। তাই সেখানে আলোকে 'কৃপণ' বলা হয়েছে।

১৫) "সেখানে নিভৃত অবকাশে তুমি/সংগ্রহ করছিলে দুর্গমের রহস্য" – 'সেখানে' বলতে কোন জায়গার কথা বোঝানো হয়েছে?

উঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'আফ্রিকা' কবিতার আলোচ্য অংশে 'সেখানে' বলতে আফ্রিকার নিরক্ষীয় অঞ্চলের ঘন অরণ্যভূমির কথা বোঝানো হয়েছে।

১৬) "চিনছিলে জলস্থল-আকাশের দুর্বোধ সংকেত"- কে চিনছিল?

উঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'আফ্রিকা' কবিতা থেকে নেওয়া আলোচ্য অংশে জলস্থল-আকাশের দুর্বোধ্য সংকেতকে চিনে নিচ্ছিল আফ্রিকা।

১৭. প্রকৃতির দৃষ্টি-অতীত জাদু/মন্ত্র জাগাচ্ছিল” – প্রকৃতির দৃষ্টি- অতীত জাদু' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উঃ প্রকৃতির দৃষ্টি-অতীত জাদু বলতে প্রকৃতির বৈচিত্র্যপূর্ণ নানা অচেনা দিকগুলির কথা বলা হয়েছে। যার রহস্য আদিম মানুষ তার বুদ্ধি ও জ্ঞান দিয়ে ভেদ করতে পারেনি।

১৮) "বিদ্রূপ করছিলে ভীষণকে" কীভাবে 'বিদ্রূপ' করছিল?

উঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'আফ্রিকা' কবিতার আলোচ্য অংশে নবগঠিত আফ্রিকা মহাদেশ নিজের প্রতিকূলতার ছদ্মবেশে প্রাকৃতিক ভয়ংকরতা ও ভীষণতাকে 'বিদ্রূপ' করছিল।

১৯) "শঙ্কাকে চাচ্ছিলে হার মানাতে" - কে, কীভাবে শঙ্কাকে হার মানাতে চেয়েছিল?

উঃ দুর্গম দুর্ভেদ্য আফ্রিকা মহাদেশ নিজেকে উগ্র করে তুলে তার ভয়ংকর মহিমায়, বিধ্বংসী তাণ্ডবলীলার প্রচণ্ড শব্দে ভয়কে হার মানাতে চেয়েছিল।


২০. কালো ঘোমটার নীচে/অপরিচিত ছিল তোমার মানবরূপ" - এখানে 'কালো ঘোমটা' কী?

উঃ কালো ঘোমটা বলতে এখানে আদিম অরণ্যে ঘেরা আফ্রিকার যে ছায়া ও অন্ধকারের বিস্তার তার কথা বলা হয়েছে।

২১ "অপরিচিত ছিল তোমার মানবরূপ” তার মানবরূপ কীভাবে অপরিচিত ছিল?

উঃ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'আফ্রিকা' কবিতায় মানবরূপ অপরিচিত ছিল উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে।

২২ "অপরিচিত ছিল তোমার মানবরূপ/উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে” – কার মানবরূপ, কাদের কাছে উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে অপরিচিত ছিল?

উঃ আলোচ্য অংশে আফ্রিকা মহাদেশের মানবরূপ যেন তার অরণ্যে-ঢাকা 'কালো ঘোমটার নীচে' সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির কাছে উপেক্ষার কলুষিত দৃষ্টিতে অপরিচিত ছিল।

২৩. হায় ছায়াবৃতা" কাকে, কেন 'ছায়াবৃতা' বলা হয়েছে?
উঃ আদিম, ঘন অরণ্যে ঢাকা আফ্রিকায় সূর্যরশ্মি ঢুকতে না পারায় তাকে 'ছায়াবৃতা' বলা হয়েছে।
 
২৪। "গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে"- তারা কী করল?

উঃ উন্নত সভ্যতার গর্বে অন্ধ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি লোহার হাতকড়ি দিয়ে আফ্রিকার মানুষদের কৌশলে বন্দি করল এবং ক্রীতদাস বানাল।

২৫) "নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতা” কীভাবে নির্লজ্জ অমানুষতা প্রকাশ পেল?

উঃ সাম্রাজ্যবিস্তারের লক্ষ্যে মানুষ মানুষকে দীর্ঘকাল ধরে শিকল পরিয়েছে। তথাকথিত সভ্য মানুষের বর্বর লোভের মধ্য দিয়ে নির্লজ্জ অমানুষতা প্রকাশ পেয়েছে।

২৬ সমুদ্রপারে সেই মুহূর্তেই”- সমুদ্রপারে তখন কী ঘটছিল?

উঃ আফ্রিকা যখন অত্যাচারিত, লাঞ্ছিত, অপমানিত তখন সমুদ্রপারে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির পাড়ায় পাড়ায় মন্দিরে পুজোর ঘণ্টা বাজছিল। শিশুরা মায়ের কোলে খেলা করছিল, কবিরা সুন্দরের আরাধনা করছিলেন।

২৭) "মন্দিরে বাজছিল পূজার ঘণ্টা" - কেন এই পুজোর ঘণ্টা বাজছিল?

উঃ সকাল এবং সন্ধ্যায় দয়াময় দেবতার নাম স্মরণ করে ঔপনিবেশিক প্রভুদের মন্দিরে পুজোর ঘণ্টা বাজছিল।

২৮) "কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল" - কবির সংগীতে কী বেজে উঠেছিল?

উঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'আফ্রিকা' কবিতার আলোচ্য অংশে করি সংগীতে বেজে উঠেছিল সুন্দরের আরাধনা।

২৯. প্রদোষকাল' বলতে কোন্ সময়কে বোঝানো হয়েছে?

উঃ প্রদোষকাল বলতে সান্ধ্যকাল বা দিনের অন্তিম সময়কে বোঝালে হয়েছে।

৩০) গুপ্ত গহবর থেকে পশুরা বেরিয়ে এসে কী ঘোষণা করেছিল?

উঃ গুপ্ত গহবর থেকে বেরিয়ে এসে পশুরা দিনের অন্তিমকাল ঘোষণা করেছিল।

৩১. এসো যুগান্তের কবি"- কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 'যুগান্তের কবি'-র কাছে কোন্ ডাক দিয়েছেন?

উঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যুগান্তরের কবিকে আসন্ন সন্ধ্যার শেষে অপমানিত আফ্রিকার পাশে দাঁড়ানোর ডাক দিয়েছেন।

৩২) "আসন্ন সন্ধ্যার শেষ রশ্মিপাতে”- সন্ধ্যাকাল আসন্ন কেন?

উঃ অশুভ ধ্বনিতে দিনের অন্তিমকাল ঘোষণা করেছে গুপ্ত গহ্বরের পশুরা, দিনের শেষে পশ্চিম দিগন্তও ঝঞ্ঝাবাতাসে শ্বাসরুদ্ধ। সভ্যতার যেন সংকটকাল উপস্থিত। তাই রূপকার্থে বলা হয়েছে সন্ধ্যাকাল আসন্ন।

৩৩) "ক্ষমা করো" - এই ক্ষমাপ্রার্থনার মধ্য দিয়ে কবির কোন্ মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে?

উঃ এই ক্ষমাপ্রার্থনার মধ্য দিয়ে কবির অনুশোচনা এবং বিবেকবোধের প্রকাশ ঘটেছে।


৩৪. "সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী" সভ্যতার শেষ 'পুণ্যবাণী'-টি কী হওয়া বাঞ্ছনীয় বলে কবি মনে করেন?

উঃ আফ্রিকা কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মনে করেন যুগান্তের কবির কণ্ঠে সভ্যতার শেষ 'পুণ্যবাণী'-টি হওয়া উচিত 'ক্ষমা করো'।

Post a Comment

0 Comments